জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) ‘৮০০ কোটি জীবন, অপরিসীম সম্ভাবনা’ শিরোনামে বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি-২০২৩ প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে এখনও শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশে ১৮ বছরের আগেই ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। গত ১৯ এপ্রিল প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে ২০৪টি দেশ ও অঞ্চলের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্বে বাল্যবিয়ের হারের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। শীর্ষ চারটি অবস্থানে রয়েছে আফ্রিকার আরও পাঁচটি দেশ।
এ ভূখণ্ডে সর্বপ্রথম ১৯২৯ সালে বাল্যবিয়ে রোধে একটি আইন হয়েছিল। ২০১৭ সালে নতুন অনেক সংযুক্তিসহ বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন করা হয়। এ আইনের ১৯ নম্বর ধারায় বলা আছে– ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিধি দ্বারা নির্ধারিত কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশে এবং পিতা-মাতা বা প্রযোজ্য অভিভাবকদের সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।’ এই বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে যত ভালো বিধান থাকুক না কেন, ১৯ নম্বর ধারায় সরাসরি বাল্যবিয়েকে বৈধতা প্রদান করেছে। আইনটিতে অনেক ফাঁকফোকর রাখা হয়েছে। বলা হলো বিশেষ প্রেক্ষাপটের কথা। অথচ বিশেষ প্রেক্ষাপটের কোনো ব্যাখ্যা নেই। কেউ বলতে পারেন– আমার মেয়ে লেখাপড়া করে না; বা ওকে আমার খাওয়ানোর সামর্থ্য নেই; আবার কেউ বলতে পারেন– ওই মেয়ে তো প্রেম করছে। আর দুয়েক বছর পর তো সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়েই যাবে। জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের ওপর চাপ দিতে হবে।
আমাদের শ্রেণিবিভক্ত সমাজে নিম্নশ্রেণির মানুষের মধ্যে বাল্যবিয়ের হার অনেক বেশি। সেখানে অনেক ক্ষেত্রে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ের শর্তে ধর্ষককে মুক্তি দেওয়া হয়। শুধু গ্রাম্য সালিশেই নয়, আদালতও ধর্ষণের শিকার নারীকে বিয়ের শর্তে ধর্ষককে মুক্তি দিচ্ছেন। আমাদের আইনে যখন ধর্ষকের সঙ্গে বিয়েকে বৈধতা দেওয়া হয়, তখন কার্যত ধর্ষণকেই উৎসাহ দেওয়া হয়। আইনের এমন ফাঁকফোকর বাল্যবিয়ের একটা বড় কারণ। এর মূল কারণ হলো সমাজ বাস্তবতা। ধর্ম প্রশ্নে সমাজে অনেক বিভাজন দেখা যায়। তবে বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে সব ধর্মের ক্ষেত্রেই নেতিবাচক মিল দেখা যায়। এর একটি সামাজিক প্রভাব খুব স্পষ্ট।
জেড আই খান পান্না
চেয়ারপারসন, আসক
প্রকাশিত লিঙ্কঃ আইনের দায়