আন্তর্জাতিক নির্যাতন বিরোধী দিবস
মধ্যবিত্ত ও নির্দিষ্ট আয়ের লোকজনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা একরকম বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। নিম্নবিত্তদের ক্ষেত্রে সেই বিপর্যয় তুলনামূলক কম। মধ্যবিত্তের সহ্যক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এই শ্রেণির মধ্যে পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। তবে মূল বিষয় হলো মন-মানসিকতা। পরিবারে এসে নারীকেই কেন আঘাত করতে হবে? কারণ ধরে নেওয়া হয়, নারী দুর্বল। প্রতিরোধ করতে পারবেন না। তাঁর চরিত্রের ওপর সহজেই কালিমা দেওয়া যায়।
এই সমাজে একজন পুরুষ পতিতালয়ে গেলে দোষী হয় না। কিন্তু যে নারী পতিতালয়ে থাকেন, তাঁর জানাজা হয় না। অনেক সময় কবরও দিতে দেওয়া হয় না। কোনো নারীকে তাঁর স্বামী নির্যাতন করে যখন বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা বলেন, তখন সমাজ সেটিকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়। তার মানে স্ত্রীকে মারধর করা স্বামীর জন্য স্বাভাবিক ঘটনা। ধর্মের নামে পিতৃতন্ত্রকে জায়েজ করা হয়।
পারিবারিক নির্যাতনের মূল কারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। পৃথিবীর পশু-পাখি, অন্যান্য প্রাণী চলছে মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায়। আমরাও একসময় মাতৃতান্ত্রিক ছিলাম। কিন্তু এখন চলছে পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা। আমরা এমন এক সমাজে আছি, যেখানে একজন মুক্তিযোদ্ধার কফিনের সামনে নারী ইউএনওকে সম্মান জানাতে দেওয়া হয় না।
সমাজ, আইন, বিচার, রাজনীতি বা মসজিদ-মন্দিরে একই অবস্থা। সুপ্রিম কোর্টে এক নারী বিচারপতি রায় দিয়েছেন– নারী বিয়ের কাজি হতে পারবেন না। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, যেহেতু মাসের নির্দিষ্ট সময়ে নারী ‘অশুচি’ বা ‘অপবিত্র’ থাকেন, তাই তিনি কাজি হতে পারবেন না। অথচ নিকাহ রেজিস্ট্রার কিন্তু বিয়ের সময় কলেমা পড়ান না। এ নিয়ে আমি বিরোধিতা করেছি। অন্য আইনজীবীরা কোনো প্রতিবাদ করেননি।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এমনি এমনি নারীর সব অধিকার মেনে নেবে না। যেটুকু পুরুষতন্ত্রের পক্ষে সেটুকু নিচ্ছে। সমতার প্রশ্নে গ্রহণ করতে এ ব্যবস্থাকে বাধ্য করতে হবে। সেই সঙ্গে সচেতনতা বাড়াতে হবে। কারণ হাজার বছর ধরে এ ব্যবস্থা চলে আসছে। সম্প্রতি নারীরা বেশি সংখ্যায় ডিভোর্স দিচ্ছেন। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যই এটা হচ্ছে। নারী যখন অধিকার সচেতন হন, তখন তিনি প্রতিবাদ করেন। যেখানে সম্মান থাকবে না, সেখানে নারী থাকতে চাইবেন না। তখন তিনি ডিভোর্স দেন। নারীকে সমর্থ করার জন্য স্কুল পর্যায়ে নৈতিক শিক্ষা যেমন জরুরি, তেমনি জুডো-কারাতের মতো আত্মরক্ষার কৌশল বাধ্যতামূলকভাবে শেখানো দরকার। কারণ একজন নারী যখন ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন, তখন তাঁর ব্যাগ ও ওড়না ধরে টান দিলে তিনি ওড়না সামলাতে গিয়ে ব্যাগ ছেড়ে দেন। আমাদের এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
জেড আই খান পান্না
চেয়ারপারসন, আসক
প্রকাশিত লিঙ্কঃ পুরুষতান্ত্রিক সমাজই মূল সমস্যা