ASK Condemns and Expresses Grave Concern over the Brutal Killings of a Garment Worker in Mymensingh and the Child Daughter of a BNP Leader in Lakshmipur amid Mob Violence

২১ ডিসেম্বর ২০২৫

সংবাদ বিবৃতি

মব সহিংসতায় ময়মনসিংহে একজন গার্মেন্টস শ্রমিক ও লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার শিশু কন্যার নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ

ময়মনসিংহের ভালুকা ও লক্ষ্মীপুর জেলায় সংঘটিত দুটি পৃথক কিন্তু ভয়াবহ নৃশংস হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মানবাধিকার সুরক্ষা এবং আইনের শাসন নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এই দুই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, ময়মনসিংহের ভালুকায় কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পাইওনিয়ার্স নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড কারখানার কর্মী দিপু চন্দ্র দাসকে গত ১৮ ডিসেম্বর পরিকল্পিত মব তৈরি করে সংঘবদ্ধভাবে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে তাঁর মরদেহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভাজকের একটি গাছে বিবস্ত্র অবস্থায় ঝুলিয়ে রেখে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই নৃশংসতা সরাসরি বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদে নিশ্চিত আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার ও জীবনের অধিকার এর চরম লঙ্ঘন। একই সঙ্গে সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীরই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার কোনো অধিকার নেই। ধর্ম অবমাননার অভিযোগ থাকলে তা তদন্ত ও বিচার করার দায়িত্ব একমাত্র আদালতের; মব তৈরি করে শাস্তি দেওয়ার সংস্কৃতি সম্পূর্ণ বেআইনি।

অন্যদিকে, লক্ষ্মীপুর জেলায় ১৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের বাড়িতে দুর্বৃত্তরা তালা লাগিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ঘরের ভেতরে থাকা ৭ বছর বয়সী এক শিশুকন্যা অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হয়। এই ঘটনাটি রাজনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি শিশু অধিকার ও মানবিকতার চরম লঙ্ঘনের এক ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। একটি শিশুকে এভাবে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা শুধু ফৌজদারি অপরাধ নয়, এটি বর্তমান সময়ে নিরাপত্তা সক্ষমতার দুর্বলতা মনে করায়ে দেয়।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, এ ধরনের নৃশংস সহিংসতা আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ থাকছে না। বারবার এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রমাণ করে যে, অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর, দৃষ্টান্তমূলক ও বিচার নিশ্চিত না হওয়ায় এক ধরনের দায়মুক্তির সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। কেবল ঘটনার পর আটক বা গ্রেপ্তার করলেই রাষ্ট্রের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তিদের পাশাপাশি উসকানিদাতা, পরিকল্পনাকারী এবং সংঘবদ্ধ সহিংসতায় মদদ দাতাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে, এ ধরনের ঘটনার পেছনে থাকা প্রশাসনিক ব্যর্থতার বিষয়গুলোও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) দৃঢ় ভাবে মনে করে, এ সকল ঘটনা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়, আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে। রাষ্ট্র যদি এখনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সময় ক্ষেপন করে, তবে এ ধরনের সহিংসতা সমাজে আরও গভীরভাবে প্রোথিত হবে, যার দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না।